রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ দেড় হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। বুধবার এ সংক্রান্ত ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। দেশটির প্রভাবশালী এ দলটির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় পৌঁছাতে সমঝোতার অংশ হিসেবেই তাদের মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা
চুক্তি অনুযায়ী এসব বন্দিকে যুদ্ধের ময়দানে না ফেরার লিখিত প্রতিশ্রম্নতি দিতে হবে। বিনিময়ে তালেবানরা এক হাজার সরকারি সেনাকে হস্তান্তরে সম্মত হয়েছে। ডিক্রি অনুযায়ী, ১৫০০ বন্দিকে ১৫ দিনের মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। প্রতিদিন ১০০ বন্দি আফগান জেল থেকে বের হবে। যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পরই এ উদ্যোগ নিল কাবুল।
যদিও এর আগে তালেবান বন্দিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন দেশটির মার্কিন সমর্থিত প্রেসিডেন্ট। তবে বুধবারের ডিক্রিতে স্পষ্টতই তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন কিংবা সরে আসতে রীতিমত বাধ্য হয়েছেন।
মুক্তির পাশাপাশি আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের আলোচনাও অব্যাহত থাকবে। যদি আলোচনা অগ্রসর হয় তাহলে আফগান সরকার প্রতি দুই সপ্তাহে ৫০০ করে বন্দিকে মুক্তি দেবে। সব মিলিয়ে মোট পাঁচ হাজার তালেবান মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
চুক্তি অনুযায়ী, তালেবানের সহিংসতা কমিয়ে আনা অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যাতে আল-কায়েদা বা অন্য কোনও চরমপন্থি সংগঠন পরিচালিত হতে না পারে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ানোর অংশ হিসেবে বন্দি মুক্তি দেওয়া হচ্ছে যাতে আফগানিস্তানের দীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধ বন্ধ করতে উভয়পক্ষ সরাসরি আলোচনায় বসতে পারে। মঙ্গলবার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্দি মুক্তির দাবির মুখে তা পিছিয়ে যায়।
এএফপি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তালেবান নেতাদের কাউন্সিলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘তারা যেসব বন্দিকে মুক্তি চান তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কাবুলের মার্কিন সমর্থিত সরকার এমন বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে যারা বয়স্ক, অনেক অসুস্থ বা যাদের কারাদন্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।’
তালেবানের রাজনৈতিক মুখপাত্র সুহাইল শাহীন মঙ্গলবার এক টুইটে বলেন, ‘তারা শুধু সেই বন্দিদেরই গ্রহণ করবে যাদের নাম তালিকায় আছে। আর প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত ডিক্রি অনুযায়ী, ‘বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বাকি থাকা সাজার মেয়াদ’ দেখে মুক্তি দেওয়া হবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদিত এই ঐতিহাসিক চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ১৩৫ দিনের মধ্যে দেশটিতে থাকা তাদের সেনা সংখ্যা ১২ হাজার থেকে কমিয়ে আট হাজার ৬০০-তে নামিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে। তালেবানরা চুক্তিটি মেনে চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটোভুক্ত মিত্র দেশগুলোর ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে হেলমান্দ প্রদেশে আফগান বাহিনীর উপর তালেবানের হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালালে চুক্তিটির টিকে থাকার সম্ভাবনা নাজুক হয়ে পড়ে।
এছাড়া দেশটিতে সদ্য শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও উভয় পক্ষের জন্যই শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়াকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গত বছরের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রধান দুই প্রার্থীই নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করেন। সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুইজনের আলাদা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে।
আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সামান্য ব্যবধানে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু আবদুলস্নাহ আবদুলস্নাহর অভিযোগ, কারচুপি করে আশরাফ ঘানিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি নিজেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দাবি করতে থাকেন। তবে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ার করেছেন যে, বর্তমান রাজনৈতিক বিরোধিতা শান্তি আলোচনার সময় ‘সরকারের অবস্থানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।’
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।